শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের সদস্য ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্কের ভূমিকা (পাঠ ৪)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় পরিবারে শিশুর বেড়ে ওঠা | - | NCTB BOOK
482
482

পরিবার সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। শিশুর জীবনের ভালো ও খারাপ অভ্যাস পরিবারের সামাজিকীকরণের ফল। পরিবারের মধ্যেই শিশুর সামাজিক নীতিবোধ, নাগরিক চেতনা, সহযোগিতা, সম্প্রীতি, ভ্রাতৃত্ববোধ, আত্মত্যাগ ও ভালোবাসা জন্মে। স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতাও পারিবারিক শিক্ষার ফল। আমরা এ পাঠে শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা ও পারস্পরিক সম্পর্কের প্রভাব সম্পর্কে জানব।

পরিবারের সদস্যদের আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে শিশুর সাথে একটা পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যা শিশু মনে বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে। শিশুর সবচেয়ে কাছের মানুষ হলেন তাদের মা-বাবা। আবার মা-বাবা এ দুই জনার মধ্যে অধিকতর কাছের মানুষ হলেন মা। সুতরাং শিশুর সামাজিকীকরণের প্রথম সূত্রপাত ঘটে মার কাছ থেকেই, মা শিশুর খাদ্যাভ্যাস গঠন করেন। শিশুর ভাষা শিক্ষার প্রথম মাধ্যম 'মা'। মা শিশুকে যেসব খাদ্যের প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি করাবেন, শিশুর খাদ্যাভ্যাস ও আচরণে তার প্রভাব লক্ষ করা যাবে। পরবর্তী সময়ে বর্ণ শিক্ষা, শব্দ শিক্ষা, ছড়া শিক্ষা 'মা'-ই প্রথম দিয়ে থাকেন। এ সবই শিশু মনে প্রভাব ফেলে যা তার আচার-আচরণের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।

বাবা ও মা যখন একক বা যৌথভাবে পরিবারের জন্য উপার্জন করেন তখন সংসার পরিচালনার জন্য তাদেরকে অনেক নিয়মনীতি শৃঙ্খলা প্রয়োগ করতে হয়। পিতামাতার এই আচরণ, মূল্যবোধ শিশুর সামাজিকীকরণকে প্রভাবিত করে। তোমার নিজের পরিবারে পিতামাতা, ভাই বোন যে ভূমিকা পালন করে তা অনুসন্ধান করে দেখতে পার। দেখবে পরিবারের বড় ভাই ও বোনদের কাছ থেকে তোমরা বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা, সহমর্মিতা, শৃঙ্খলাবোধ, নিয়ম নীতি, স্নেহ-ভালোবাসা প্রভৃতির শিক্ষা পেয়ে থাক। যা পরবর্তী সময়ে এর প্রভাব তোমাদের আচরণে লক্ষ করা যায়। দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-চাচি, চাচাত ভাই ও বোন এবং নিকট আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে অনেক বিষয় শিশুর আচরণে রেখাপাত করে। এটি শিশুর নিজ সম্পর্কে ধারণাকে সমৃদ্ধ ও সুদৃঢ় করে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন শিশুর 'নিজ' ও 'অপর' সম্পর্কে ধারণা তৈরি করা হয় তার পরিজনদের কাছ থেকেই যা তাকে পরবর্তীতে তার আত্মপরিচয় গঠনে সাহায্য করে।

শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের জন্য সুন্দর পারিবারিক পরিবেশ প্রয়োজন। এজন্য প্রয়োজন পিতামাতার পারস্পরিক সম্পর্ক ভালো হওয়া। তাছাড়া পারিবারিক ঝগড়া-বিবাদ ও মনোমালিন্য এড়িয়ে সকলের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা প্রয়োজন। এ সবই শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণে প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে যেসব পরিবারের পিতামাতা উভয়ই চাকরিজীবী, সেসব পরিবারে শিশুকে গৃহভৃত্যের বা আত্মীয়স্বজনের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। এসব পরিবারের পিতামাতা শিশুদের জন্য খাদ্য, শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদনে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন না। ফলে শিশুর সামাজিকীকরণে বাবা-মার পাশাপাশি অন্যদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

পারিবারিক বিশৃঙ্খলা, গৃহস্থালি নির্যাতন, নারী নিপীড়ন, শিশু নির্যাতন, পিতামাতার বিচ্ছেদ, ছাড়াছাড়ি, ভিন্ন গৃহে বসবাস, পিতা কিংবা মাতা অথবা পিতামাতা উভয়ের মৃত্যু শিশুর সামাজিকীকরণে বাধার সৃষ্টি করে। এসব পরিবারে শিশুর সামাজিকীকরণ বাধাগ্রস্ত হয়। এসব শিশুর আচরণে একাকীত্ববোধ, ভয়, অবসাদ, ট্রমা, প্রতিহিংসা, আত্মকেন্দ্রিক মনোভাবসহ নানা মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। সুতরাং শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের সদস্যদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায় অত্যধিক শাসন কিংবা অধিক স্নেহ উভই শিশুর সামাজিকীকরণকে বাধাগ্রস্ত করছে। এ কারণে শিশুর আচরণ গঠনের প্রতি পিতামাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ভূমিকার সমন্বয় করতে হবে। পরিবারের সকল সদস্যের ভূমিকার মধ্যে সমন্বয় সাধনই শিশুর আচরণ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। এসব শিশুকে আত্মসচেতন, ব্যক্তিত্ববান হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

কাজ-১: "পরিবারের সদস্যদের ভূমিকার সমন্বয়ই শিশুর সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের উপায়" দলীয় আলোচনায় যুক্তি প্রদর্শন কর।
common.content_added_and_updated_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion